বৃহস্পতিবার, ৩১ Jul ২০২৫, ১২:২৯ পূর্বাহ্ন

গোয়ালন্দে অপরিকল্পিত খাল খননে দেবে গেছে সেতু

রাজবাড়ী প্রতিনিধিঃ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত খাল খননের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে একটি সেতু। ছয় মাস আগে খাল খননের কারণে সেতুর নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে সেতুর মাঝের অনেকটা অংশ দেবে গেছে। কিন্তু সেতুটি ঠিক করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেইনি কর্তৃপক্ষ। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।

জানা গেছে, সেতুটি গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ইউনিয়ন এবং গোয়ালন্দের ছোট ভাকলা, রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাচুরিয়া ও বরাট ইউনিয়নের লোকজনের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম। গোয়ালন্দ উপজেলার সঙ্গে রাজবাড়ী সদর উপজেলার সহজ ও নিরাপদ যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিকল্প পথ হিসেবে প্রতিদিন কয়েকশ মানুষ চলাচল করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, অপরিকল্পিতভাবে খাল খননের কারণে সেতুর নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে সেতুটি দেবে মাঝখানে ও নিচের কয়েকটি স্থান ভেঙে গেছে। সেতুতে উঠতে সংযোগ সড়কের বেশ কয়েক জায়গার মাটি সরে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে মাহিন্দ্রা, অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেল ও পথচারী আসা-যাওয়া করছে। খালের দুই পাড়ে গাছের গুঁড়ি ও টিন দিয়ে ভাঙন রোধের কাজ চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০২-২০০৩ অর্থবছরে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে তেনাপচা খালের ওপর প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের ২ ভেন্ট বক্স কালভার্ট বা ছোট সেতু নির্মাণ করা হয়। তেনাপচা আশ্রয়ণ ইউজেড-আরএইচডি (পিয়ার আলী মোড়) এলজিইডি সড়কের ৫২৩ মিটার চেইনেজে অবস্থিত সেতুটি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত খাল খনন করার পরই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা আক্কাস ফকির বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত খাল খননের কারণে সেতুর তলা থেকে মাটি সরে গিয়ে সেতু দেবে গেছে। গত নভেম্বরে প্রশাসন থেকে সেতুতে যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করলেও এখনও ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করছে। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, অপরিকল্পিত খাল খননের ফলে পাড় ভেঙে যাওয়ায় আমাদের ঘর-বাড়ি এখানে থাকছে না। কয়েক মাস ধরে খাল পাড়ে কাজ শুরু হলেও তেমন কোনো গতি দেখছি না। কিছু দিনের মধ্যে আবার এই খালে পানি আসবে। তার আগে কাজ শেষ না করলে ঘর-বাড়ি আর কিছুই থাকবে না।

দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাফিজুল ইসলাম বলেন, বর্ষাকালে প্রচণ্ড বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পাশের মাটি ধসে ব্রিজটি দেবে গেছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকায় নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই ভারী যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অপরিকল্পিত খাল খননে ছোটভাকলা ইউপির আজিজ মাস্টারের বাড়ি থেকে তেনাপচা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার খালের দুই পাড় ধসে গেছে। খাল পাড়ে যাদের বাড়ি রয়েছে তাঁরা ঝুঁকিতে আছে। পাউবোর জরুরি সংস্কার হিসেবে খালের দুই পাশে প্যালাসাইডিং করছেন। প্যালাসাইডিং হলেও বর্ষার পানি প্রবেশ করলে জরাজীর্ণ সেতুটি থাকবে না। সেতু ধসে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

পাউবো দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী ইকবাল সরদার বলেন, খালের উভয় পাশে বাড়িসহ স্থাপনা থাকায় সিডিউল অনুযায়ী খনন সম্ভব হয়নি। খাল অনুযায়ী সেতুটি সঠিক মাপে করা হয়নি বলে পানি প্রবাহের চাপে সেতুর কয়েকটি স্থান ধসে গেছে। স্থানীয়দের চলাচলের সুবিধার্থে দুটি গ্রুপের প্যালাসাইডিং কাজ চলছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবু সাঈদ মন্ডল বলেন, সেতুটি ৫০ বছরেও কিছু হতো না। অপরিকল্পিত খাল খননের ফলে মাটি ধসে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমরা ১২ মিটারের বেশি ব্রিজ করতে পারি না। খালটি অনেক প্রশস্ত হওয়ায় আমাদের কালভার্ট বা ব্রিজ করার ব্যবস্থা নেই। এখন এলজিইডি থেকেই সেতু করতে হবে।

উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান বলেন, সেতুটি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের। উভয় পাশে এলজিইডির কার্পেটিং পাকা সড়ক রয়েছে। খাল খননের কারণে সড়কের অনেক স্থানে ধসে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। খালে প্রায় সাড়ে ৫ মিটার চওড়া এবং ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা দরকার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com